পুষ্টিমূল্যঃ আদায় ক্যালসিয়াম ও প্রচুর ক্যারোটিন থাকে।
ভেষজ গুণঃ পেট ফাঁপা ও ফোলা এবং সর্দি-কাশিতে আদা ব্যবহৃত হয়।
ব্যবহারঃ মসলা হিসেবে আদা জনপ্রিয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ পানি নিকাশের সুব্যবস্থা আছে এমন উঁচু বেলে-দো-আঁশ ও ও বেলে মাটি আদা চাষের জন্য উপযোগী।
জাত পরিচিতিঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে উদ্ভাবিত উন্নত জাত বারি আদা-১।
বারি আদা-১: প্রতিটি গোছায় রাইজোমের ওজন ৪০০-৪৫০ গ্রাম। প্রচলিত জাতগুলোর তুলনায় এর ফলন বেশি। স্থানীয় হাতের মতো বারি আদা-১ সহজে সংরক্ষণ করা যায়।
তবে স্থানীয় জাত যেমনঃ রংপুরী, খুলনা, টেংগুরা ইত্যাদি জাতেরও চাষ করা হয়।
চারা তৈরিঃ
বীজ লাগানোঃ ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত লাগানো যায়। সাধারণতঃ ১২-১৫ গ্রাম ওজনের ১-২টি কুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগানো হয়। ৪০-৪৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২০ সে.মি. দূরে ৫ সে.মি. গভীরে আদা লাগানো হয়। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
সার ব্যবস্থাপনাঃ আদার ভাল ফলন পেতে হলে জমির উর্বরতার উপর নির্ভর করে প্রতি হেক্টরে গোবর সার ৪-৬ টন, ইউরিয়া ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি ১৭০-১৯০ কেজি, এমওপি ১৬০-১৮০ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। জমি প্রস্ততির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি ও ৮০-৯০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। কন্দ লাগানোর ৫০ দিন পর ১০০-১২০ কেজি হারে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা হয়। লাগানোর ৯০ দিন ও ১২০ দিন পর যথাক্রমে ২য় ও ৩য় কিস্তির সার উপরি প্রয়োগ করা হয়। ভেলা সামান্য কুপিয়ে ১ম কিস্তির সার প্রয়োগ করে আবার ভেলা করে দিতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির উপরি প্রয়োগের সময় প্রতি হেক্টরে প্রতিবারে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া ও ৪০-৪৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির সার সারির মাঝে প্রয়োগ করে মাটি কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে সামান্য পরিমাণ মাটি ভেলীতে দিতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ আদা লাগানোর পর বৃষ্টি হলে সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে বৃষ্টি না হলে ও মাটিতে রসের অভাব থাকলে নালাতে সেচ দিতে হবে এবং ২-৩ ঘন্টা পর নালার অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে। বৃষ্টির পানি যেন জমতে না পারে সেজন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে। সার উপরি প্রয়োগের সময় আগাছা পরিষ্কার করে প্রয়োগ করা ভালো।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনাঃ
পোকার নামঃ রাইজোম ফ্লাই বা কান্ডের মাছি পোকা
এ পোকার আক্রমণে হঠাৎ করে গাছ মরে যায়। পোকা আদায় আক্রমণ করে ও পরে পচন ধরে। আদা উৎপাদন এলাকার সকল জায়গাতে এ পোকার আক্রমণ দেখা যায় এবং ক্ষতির পরিমান ১০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত হয় বলে বর্ষা মৌসুমে ঘন ঘন ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে ও ক্ষেতে এ পোকার আক্রমণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মা পোকা দেখতে গাঢ় বাদামী বর্ণের ও পাখার উপর কালো ফোটা আছে। কীড়া ধূসর সাদা বর্ণের। বৃষ্টিপাত ও আদ্র আবহাওয়ায় এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
ক্ষতির নমুনাঃ আক্রমণে সবুজ পাতা হঠাৎ করে হলুদ রং ধারণ করে। আক্রান্ত পাতা আগা থেকে মরতে শুরু করে। রাইজোমটি ধূসর বর্ণের হয়ে পচন ধরে। অধিক আক্রমণে সমস্ত আদা পচে যায়।
জীবন চক্রঃ স্ত্রী পোকা পচা আদায় গুচ্চাকারে ডিম পাড়ে। ৩-৪ দিন পর ডিম থেকে কীড়া বের হয়। কীড়া অবস্থায় ১৬-১৭ দিন থেকে পুত্তলিতে পরিণত হয়। পুত্তলি অবস্থায় ১৪-১৫ দিন থাকার পর পূর্ণাঙ্গ পোকা বেরিয়ে আসে। এদের জীবন চক্র সম্পন্ন করতে ৩৮-৬২ দিন লাগে।
ব্যবস্থাপনাঃ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে। বীজ লাগানোর সময় রোগ ও পোকা মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। রাইজোম না ভেঙ্গে লাগানো এবং লাগানোর পূর্বে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ (প্রতিলিটারে ২ গ্রাম হারে ) শোধন করে লাগাতে হবে। বর্ষাকালে জমিতে যাতে পানি জমতে না পারে তার জন্য পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্ত গাছ মাটি সহ তুলে ধ্বংশ করা।
পোকার নামঃ ডগা ছিদ্রকারী পোকা
কান্ড আক্রমণ করে বলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফলে উৎপাদন কম হয়। এ পোকার মথ (মা) কমলা হলুদ রংয়ের এবং পাখার উপর কালো বর্ণের ফোটা থাকে। কীড়া হালকা বাদামী বর্ণের। গায়ে সুক্ষ্ণ শুং থাকে।
ক্ষতির নমুনাঃ পোকা কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের দিকে খায় বলে পাতা হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় ডেড হার্ট লক্ষণ দেখা যায়। আক্রান্ত কান্ডে ছিদ্র ও কীড়ার মল দেখা যায়। আদ্র আবহাওয়ায় এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
ব্যবস্থাপনাঃ আক্রমণ বেশি হলে, সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ২০ মিলি হারে প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। ডাইমেক্রন প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। পোকার আক্রমন বেশী হলে নুভাক্রন ১০০ ইসি ১ লিটার পানিতে ১ মিলি ওষুধ ভালোভাবে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
রোগের নামঃ রাইজম রট
পিথিয়াম এফানিডারমেটাম নামক ছত্রাকের আক্রমণের কারনে এ রোগ হয়। এ রোগ রাইজমে আক্রমণ করে বলে আদা বড় হতে পারে না ও গাছ দ্রুত মরে যায় ফলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
ক্ষতির নমুনাঃ প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে যায় কিন্তু পাতায় কোন দাগ থাকে না। পরবর্তীতে গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে মরে যায়। রাইজম (আদা) পচে যায় ও ফলন মারাত্মক ভাবে কমে যায়। ভেজা ও স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশী দেখা যায়। বর্ষাকাল বা জলাবদ্ধতা থাকলে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ রোগ বীজ, পানি ও মাটির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।
ব্যবস্থাপনাঃ আক্রান্ত গাছ রাইজোমসহ সম্পূর্ণরূপে তুলে ধ্বংস করতে হবে। রোপণের পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড বা ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশ্রিত দ্রবণে বীজকন্দ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে ছায়ার নিচে শুকিয়ে রোপণ করতে হবে। সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। একর প্রতি নিম খৈল ১০০০ কেজি অথবা বাদামের খৈল ৪৪৫ কেজি এর সাথে ইউরিয়া ৩০ কেজি, টিএসপি ২০ কেজি এবং এমপি ৫০ কেজি প্রয়োগের ফলে ফলন বৃদ্ধি পায় এবং কন্দ পচা রোগ রোধ করা যায়। কন্দ পচা রোগ দ্বারা আক্রান্তের প্রাথমিক পর্যায়ে কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম বা রিডোমিল গোল্ড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে মাটির সংযোগ স্থলে ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর প্রয়োগ করে রোগ প্রতিরোধ করা যাবে।
ফসল সংগ্রহঃ আদা লাগানোর ৯-১০ মাস পর উঠানোর উপযোগী হয়। গাছের প্রায় সব পাতা শুকিয়ে গেলে আদা তোলা হয়। ফলন প্রতি হেক্টরে ১২-১৩ টন।
উত্তর সমূহ